ভূমিকা
আপনার বইয়ের তাক কি সুন্দর সুন্দর নতুন বইয়ে ভর্তি, যেগুলো আপনি অনেক আগ্রহ নিয়ে কিনেছেন কিন্তু পড়ার সময় করে উঠতে পারেননি? "সময় নেই"—বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পথে এটাই কি আপনারও সবচেয়ে বড় বাধা? আপনি একা নন। আমাদের ডিজিটাল জীবনে distrractions এত বেশি যে, একটি বই হাতে নিয়ে শান্ত হয়ে বসাটা প্রায়ই একটি বিলাসবহুল ব্যাপার বলে মনে হয়। কিন্তু সত্যিটা হলো, বই পড়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলো সঠিক কৌশল এবং সদিচ্ছার। আজ আমরা এমন ৫টি বাস্তবসম্মত উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে আপনার ব্যস্ত জীবনযাত্রার মধ্যেই বই পড়ার জন্য সময় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
১. ছোট থেকে শুরু করুন: "মাত্র এক পাতা" নিয়ম (Start Small: The "Just One Page" Rule)
বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার সবচেয়ে বড় ভুল হলো প্রথম দিনেই ৫০ পাতা পড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা। এটি শুরুতেই আপনাকে ক্লান্ত করে ফেলবে। এর পরিবর্তে, "Atomic Habits" বইয়ের লেখক জেমস ক্লিয়ারের কৌশলটি প্রয়োগ করুন।
করণীয়:
প্রতিদিন শুধু "এক পাতা" পড়ার লক্ষ্য নিন। হ্যাঁ, মাত্র এক পাতা।এই কাজটি এতটাই সহজ যে আপনার মস্তিষ্ক এর জন্য কোনো অজুহাতই খুঁজে পাবে না। বেশিরভাগ দিনই আপনি দেখবেন, এক পাতা পড়তে শুরু করার পর আপনি নিজের আগ্রহেই আরও কয়েক পাতা পড়ে ফেলেছেন। মূল উদ্দেশ্য হলো অভ্যাসটি শুরু করা, পরিমাণটা নয়।
২. সবসময় সাথে একটি বই রাখুন (Always Carry a Book with You)
আমাদের দিনে এমন অনেক ছোট ছোট সময় নষ্ট হয় যা আমরা চাইলেই কাজে লাগাতে পারি। যেমন: ডাক্তারের চেম্বারে অপেক্ষা করার সময়, বাসে বা ট্রেনে যাতায়াতের সময়, বা কোনো বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করার মুহূর্তগুলো।
কীভাবে করবেন?
আপনার ব্যাগে সবসময় একটি হালকা paperback বই বা একটি Kindle e-reader রাখুন।
আপনি অডিওবুকও শুনতে পারেন। गाडी চালানোর সময় বা হাঁটার সময় অডিওবুক শোনা বই পড়ার একটি চমৎকার বিকল্প। এই "মৃত সময়গুলোকে" (Dead Time) পড়ার সময়ে পরিণত করুন।
৩. একটি পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন (Create a Reading Environment)
আমাদের পরিবেশ আমাদের অভ্যাসকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। বই পড়ার জন্য বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট, আরামদায়ক এবং আকর্ষণীয় জায়গা তৈরি করুন।
উদাহরণ:
আপনার বিছানার পাশের টেবিলে একটি বই এবং একটি রিডিং লাইট রাখুন।
আপনার বসার ঘরের কফি টেবিলের উপর একটি বই রেখে দিন, রিমোটের পাশে।
যখন বইটি আপনার চোখের সামনে থাকবে, তখন পড়ার কথা মনে পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। এটিকে একটি আমন্ত্রণমূলক রুটিনে পরিণত করুন।
৪. স্ক্রিন-টাইমকে রিডিং-টাইম দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন (Replace Screen Time with Reading Time)
সচেতনভাবে খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা প্রতিদিন অনেকটা সময় উদ্দেশ্যহীনভাবে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করে বা টিভি দেখে নষ্ট করি। এই সময়ের একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি পড়ার পেছনে দেওয়া যায়, তাহলে বছরে অনেকগুলো বই পড়া সম্ভব।
বাস্তবসম্মত উপায়:
ঘুমাতে যাওয়ার আগের ৩০ মিনিট ফোন ব্যবহার না করে বই পড়ার অভ্যাস করুন। এটি আপনার চোখের জন্যও ভালো এবং ভালো ঘুমাতেও সাহায্য করে।
"এক পর্ব সিরিজ দেখার পর ১০ পাতা বই পড়ব"—এই ধরনের ছোট ছোট নিয়ম তৈরি করুন।
৫. একটি কমিউনিটিতে যোগ দিন বা পড়ার চ্যালেঞ্জ নিন (Join a Community or a Reading Challenge)
একা একা কোনো অভ্যাস ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। কিন্তু যখন আপনি একটি গোষ্ঠীর অংশ হন, তখন অনুপ্রেরণা পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।
করণীয়:
Goodreads-এর মতো ওয়েবসাইটে একটি বাৎসরিক পড়ার চ্যালেঞ্জ সেট করুন।
আপনার বন্ধুদের সাথে একটি ছোট বুক ক্লাব তৈরি করতে পারেন, যেখানে আপনারা প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট বই পড়ে তা নিয়ে আলোচনা করবেন।
এই সামাজিক চাপ এবং আলোচনা আপনাকে পড়ার জন্য উৎসাহিত করবে।
উপসংহার
বই পড়া কোনো প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি আনন্দের এবং ব্যক্তিগত বিকাশের যাত্রা। সময় নেই—এই অজুহাত থেকে বেরিয়ে এসে উপরের যেকোনো একটি বা দুটি কৌশল আজই প্রয়োগ করা শুরু করুন। দেখবেন, ছোট ছোট পদক্ষেপে আপনিও একজন নিয়মিত পাঠক হয়ে উঠছেন এবং বইয়ের অসাধারণ জগৎটি আপনার জন্য উন্মোচিত হচ্ছে। মনে রাখবেন, প্রতিটি বড় পাঠকই একদিন মাত্র একটি পাতা দিয়েই শুরু করেছিল।
