ভূমিকা
আমাদের সবার জীবনেই এমন সময় আসে যখন কোনো জরুরি কাজ সামনে থাকা সত্ত্বেও আমরা তা শুরু করতে পারি না। "কাল করব," "একটু পর করছি"—এইসব ভেবে সময় নষ্ট করার এই অভ্যাসটিই হলো দীর্ঘসূত্রিতা বা Procrastination। এটি আমাদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। কিন্তু আপনি কি জানেন, কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কৌশল ব্যবহার করে এই অভ্যাস থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব? আজ আমরা তেমনই ৫টি সহজ কিন্তু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
১. The 2-Minute Rule
দীর্ঘসূত্রিতার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, আমরা কাজটিকে অনেক বড় এবং কঠিন বলে মনে করি। লেখক জেমস ক্লিয়ারের "Atomic Habits" বইয়ের এই নিয়মটি বলে, যেকোনো নতুন অভ্যাস শুরু করার জন্য সেটিকে দুই মিনিট বা তার চেয়েও কমে নিয়ে আসুন।
কীভাবে প্রয়োগ করবেন?
প্রতিদিন বই পড়ব" না ভেবে, ভাবুন "মাত্র এক পাতা বই পড়ব
গোটা ঘর পরিষ্কার করব না ভেবে, ভাবুন শুধুমাত্র একটি টেবিল গুছিয়ে রাখব।
যখন একটি কাজ শুরু করতে মাত্র দুই মিনিট সময় লাগে, তখন মস্তিষ্ক আর বাধা দেয় না। আর একবার শুরু করে দিলে, কাজটি শেষ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
২. কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করুন (Break Down Your Tasks)
একটি বড় কাজ (যেমন: একটি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া) আমাদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। এই ভয় কাটানোর সেরা উপায় হলো কাজটিকে ছোট, পরিচালনাযোগ্য (manageable) অংশে ভাগ করে ফেলা।
উদাহরণ:
বড় কাজ: এসাইনমেন্ট শেষ করা।
ছোট ভাগ:
ধাপ ১: বিষয়টি নিয়ে রিসার্চ করা (৩০ মিনিট)।
ধাপ ২: একটি আউটলাইন তৈরি করা (১৫ মিনিট)।
ধাপ ৩: ভূমিকা লেখা (২০ মিনিট)।
ধাপ ৪: মূল অংশ লেখা (১ ঘণ্টা)।
এভাবে প্রতিটি ছোট ধাপ শেষ করার পর আপনি এক ধরনের মানসিক সন্তুষ্টি পাবেন, যা আপনাকে পরের ধাপে যেতে উৎসাহিত করবে।
৩. পোমোডোরো টেকনিক (The Pomodoro Technique) অনুসরণ করুন
এটি মনোযোগ ধরে রাখার একটি অসাধারণ কৌশল। এই পদ্ধতিতে, আপনি আপনার কাজকে ছোট সময়ের ব্যবধানে ভাগ করে নেন।
পদ্ধতি:
1. একটি কাজ বেছে নিন।
2. টাইমারে ২৫ মিনিট সেট করুন এবং এক মনে কাজটি করুন।
3. টাইমার বাজার পর ৫ মিনিটের একটি বিরতি নিন।
4. এইভাবে চারটি সেশন (পোমোডোরো) শেষ করার পর একটি লম্বা (১৫-৩০ মিনিট) বিরতি নিন।
এই কৌশলটি মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে এবং একটানা কাজ করার ক্লান্তি দূর করে।
৪. নিজের জন্য একটি স্পষ্ট লক্ষ্য এবং ডেডলাইন ঠিক করুন
কাজটা করতে হবে - এভাবে না ভেবে, এই কাজটি আগামীকাল বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে - এভাবে ভাবুন। একটি স্পষ্ট লক্ষ্য এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা (Deadline) আপনাকে কাজ শুরু করতে মানসিক চাপ প্রয়োগ করে। আপনার লক্ষ্যগুলো SMART (Specific, Measurable, Achievable, Relevant, Time-bound) হওয়া উচিত।
৫. নিজেকে ক্ষমা করুন (Forgive Yourself)
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘসূত্রিতার জন্য নিজেকে অতিরিক্ত দোষারোপ করে, তারা ভবিষ্যতে আরও বেশি করে এই অভ্যাসের শিকার হয়। মনে রাখবেন, মাঝে মাঝে কাজে দেরি হওয়াটা স্বাভাবিক। এর জন্য নিজেকে দোষ না দিয়ে, ভাবুন কেন এমন হলো এবং পরেরবার কীভাবে আরও ভালোভাবে কাজটি করা যায়। নিজের প্রতি সদয় হোন।
উপসংহার
দীর্ঘসূত্রিতা কোনো চারিত্রিক দুর্বলতা নয়, এটি কেবল একটি অভ্যাস। আর যেকোনো অভ্যাসের মতোই, সঠিক কৌশল এবং অনুশীলনীর মাধ্যমে এটি পরিবর্তন করা সম্ভব। আজই উপরের যেকোনো একটি উপায় বেছে নিন এবং আপনার সবচেয়ে জরুরি কাজটি শুরু করে দিন। ছোট একটি পদক্ষেপই হতে পারে আপনার বড় পরিবর্তনের শুরু।

Thanks
ReplyDelete